নির্যাতনের শিকার এক কিশোরী গৃৃহকর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রের সহায়তায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাওয়া কিশোরী (১০) সাত বছর ধরে ওই বাসায় কাজ করছিলেন। ভাটারা থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, “বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ‘ডি’ ব্লকের ২ নম্বর সড়কের একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করছিল ওই কিশোরী।
উদ্ধারের পর কিশোরী জানিয়েছে, গৃহকর্ত্রী শারমিন হোসেন তাকে নানাভাবে নির্যাতন করত। “কারো সাথে কথা বলতে দিত না, বাইরে বের হতে দিত না, অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হত, মাঝে মাঝে বেধড়ক মারপিট করত।” এই ঘটনায় গৃহকর্ত্রী শারমিন হোসেনের বিরুদ্ধে শিশু আইন ২০১৩’র ৭০ ধারায় মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। “গ্রেপ্তারের জন্য ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাইরে থেকে তালা লাগানো ছিল,” বলেন ওসি আসাদুজ্জামান। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর শারমিন ওই বাসায় দুই ছেলে-মেয়েকে থাকতেন বলে জানান তিনি। যেভাবে উদ্ধার : ওই কিশোরীর ভাবী মনোয়ারা বেগমের দায়ের করা মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ৭ মে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে রেল লাইনের পাশে খালার বাসায় বেড়াতে গিয়ে ওই কিশোরী হারিয়ে যান।
পুলিশ বলছে, ওই বাসার রান্না ঘরেই থাকত মেয়েটি। যে ভবনের চারতলা থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে তার পাশের ভবনের চারতলায় থাকেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। গৃহকর্মীকে নির্যাতনের বিষয়টি টের পেয়ে ওই ছাত্র বিষয়টি কৌশলে মেয়েটির ব্যাপারে তথ্য নেন। মেয়েটি তার দুরাবস্থার কথা জানানোর চেষ্টা করে ওই শিক্ষার্থীকে।
ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফুল ইসলাম বলেন, “প্রায় এক মাস ধরে চেষ্টার পর ওই ছাত্র বুদ্ধি করে ইশারায় মেয়েটিকে নীচে রশি ফেলতে বলেন। কিশোরী একটি ওড়না ছিঁড়ে নীচে নামিয়ে দিলে ছাত্রটি একটি মোবাইল ফোন তাতে বেঁধে দেন।
এরপর ফোনের মাধ্যমে তার ওপর নির্যাতনের কথা শোনেন। “পরে বুধবার ভোরে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।” তিনি আরো বলেন, “উদ্ধারের পর মেয়েটি তার বাড়ির ঠিকানা বলতে পারছিল না।
অবশেষে সিলেট অঞ্চলের সাত-আট থানায় তথ্য নিয়ে সন্ধ্যার সময় জানা যায়, তার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাইতে। ঢাকায় তার এক ভাই ও ভাবীর সন্ধান পাওয়ার পর তাদের থানায় ডেকে আনা হলে তারা মেয়েটিকে শনাক্ত করেন।