রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। পুরোপুরি অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করতে হয় এমন কোনো রোগীকে অস্ত্রোপচার করা থেকে বিরত রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সপ্তাহ দু’য়েক আগেও এ হাসপাতালে সার্জারি, নাক, কান, গলা ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগীদের গড়ে প্রতিদিন ৪-৫টি করে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করা হতো। এখন অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষমাণ বিভিন্ন ওয়ার্ডের (সার্জারি, নাক, কান, গলা ও ক্যান্সার) রোগীরা প্রতিদিনই বিভাগীয় প্রধানের কাছে অস্ত্রোপচারের আবেদন করেও কোনো উত্তর পাচ্ছেন না।
হাসপাতালের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অস্ত্রোপচারকালে অপ্রত্যাশিতভাবে কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হওয়ার কারণে অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখা হযেছে। তবে হাসপাতালে ছোটখাট অস্ত্রোপচার (পুরোপুরি অজ্ঞান না করে কোমরের নীচের অংশ পর্যন্ত) চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় যে সব রোগীকে সম্পূর্ন অজ্ঞান করা হয় তাদের অস্ত্রোপচারকালে ও অস্ত্রোপচার শেষে জ্ঞান ফেরানো পর্যন্ত কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন সরবরাহের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। হাসপাতালের কেন্দ্রীয় লাইনে বড় ধরনের জটিলতার কারণে রোগীর শরীর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হওয়ায় রোগীদের মুত্যু হয়।
জানা গেছে, সম্প্রতি নাক, কান, গলা ও জেনারেল সার্জারি বিভাগে অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে একাধিক রোগীর মৃত্যু হয়। এ সব অস্ত্রোপচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমন একাধিক চিকিৎসক জানান, সাধারণত এ ধরনের অস্ত্রোপচারে রোগীর মৃত্যু হওয়ার কথা না। এমন রোগীদের মৃত্যুতে তারা নিজেরাও মানসিক অস্বস্তিতে রয়েছেন বলে জানান।
তবে হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার দাবি, বড় ও ছোট সব ধরনের অস্ত্রোপচার চলছে। অস্ত্রোপচারকালে বিভিন্ন কারণে রোগীর মৃত্যু হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি অস্ত্রোপচারকালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্যও সঠিক নয়।
তিনি বলেন, হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতিগুলো নির্দিষ্ট সময় পর পর ডিসইনফেকশন (সংক্রমণ যেন না হয়) করতে ও যন্ত্রপাতিগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা দেখতে কিউমোলেশন ও কেলিব্রেশনসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়। রোগীদের বৃহত্তর স্বার্থেই কয়েক দিন ধরে যন্ত্রপাতি পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলছে। এ সব কারণে যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার তা করা হচ্ছে না বলে স্বীকার করে জানান, আগামী দু’চারদিনের মধ্যে সব ধরনের অস্ত্রোপচার আগের মতো পুরোপুরি শুরু হবে।