সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থেকে তাদের গৌরব সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ।
২১ নভেম্বর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উপলক্ষে দেয়া বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, যেকোনো বাহিনীর উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো নেতৃত্বের প্রতি গভীর আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, পেশাগত দক্ষতা এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ নেতৃত্বের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে তাদের গৌরব সমুন্নত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।’
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সকল সদস্যকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনও জানান।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২১ নভেম্বর একটি স্মরণীয় দিন- এ কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে তিন বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর উপর সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করে। তাদের সম্মিলিত আক্রমণে ‘আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় ত্বরান্বিত হয়’।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে তিনি স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; যিনি দীর্ঘ সংগ্রাম, জেলজুলুম ও ত্যাগ তিতিক্ষা সহ্য করে সমগ্র জাতিকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন,নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি।
মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামাল, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মো. রুহুল আমিন, ইআরএ- ১’র বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নুর মোহম্মদ শেখ ও বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফকেও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য শাহাদতবরণকারী মুক্তিযোদ্ধাসহ সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান ও বীরত্বগাথা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আবদুল হামিদ বলেন,বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতির অহংকার। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকবিলা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতাসহ জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। কেবল দেশেই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে পেশাগতদক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে চলেছেন। শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালনকালে অনেক সদস্য শাহাদতবরণ করেছেন উল্লেখ করে তিনি তাদের আত্মার মাগফেরাত কমনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন,‘স্বাধীনতা আমাদের মহান অর্জন। স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ এবং এর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
তিনি বলেন,সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকার ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এর ফলে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে জনবল, স্থাপনা, আধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। আমার বিশ্বাস এসব কর্মসূচি সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, দক্ষ ও গতিশীল করবে। তিনি ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০১৭’ উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এবং বাহিনীসমূহের সকল সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।