হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বালুর মহালে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বালু খেকোদের হামলার শিকার হয়েছেন ৩ জন টেলিভিশনের সাংবাদিক। এ সময় হামলাকারীরা সাংবাদিকদের নিকট থেকে ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
চুনারুঘাট উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আফিয়া আমিন পাপ্পা গতকাল ওই বালু মহালে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
গতকাল বুধবার বিকেল আড়াইটার দিকে উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের বনগাঁও এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভা করেছে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব ও হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন। সভায় সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার বনগাঁও গোদারাঘাট পয়েন্টে খোয়াই নদী থেকে বালু উত্তোলন করছিল ‘বালু সেলিম’ সিন্ডিকেট চক্র। সিন্ডিকেটের মুল হোতা উপজেলার সাটিয়াজুরি এলাকার মৃত আশ্রব উল্লাহর ছেলে সেলিম আহমেদ ওরফে ‘বালু সেলিম’। তার সাথে রয়েছেন আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।
ইজারার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চক্রটি ৬টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিল। এমনকি বালু বহনের জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ ট্রাক্টর। স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু উত্তোলনের কারণে নানারকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। বালু বহনের জন্য ভারি ট্রাক্টর ও ট্রাক ব্যবহারের কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট। পাশাপাশি ধুলা-বালিতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিকট শব্দে চলা ট্রাক্টরগুলোর কারণে আতঙ্কে থাকে শিশুরা।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আফিয়া আমিন পাপ্পাকে নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিদ্ধার্থ ভৌমিক। গতকাল বুধবার বেলা ১টার দিকে ওই মহালে অভিযানে যান সহকারি কমিশনার আফিয়া আমিন পাপ্পা। পুলিশের সহযোগিতা ছাড়াই তিনি এ অভিযান পরিচালনা করেণ।
সহকারি কমিশনার বালু মহালে পৌঁছার আগেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন বালু সেলিম, চুনারুঘাট পৌরসভার কমিশনার আব্দুল হান্নান, জাহাঙ্গীর ও তোফাজ্জল। এছাড়াও একজন সাবেক জনপ্রতিনিধিসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। অভিযানকালে বালুকেখোদের পক্ষে কথা বলেন সহকারি কমিশনার আফিয়া আমিন পাপ্পা। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের চাপের মুখে রাস্তার পাশে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।
বালু মহাল ইজারা শর্তের ১১ নম্বরে উল্লেখ রয়েছে- ‘ইজারা কর্তৃক পরিবেশ বিধ্বংসী পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করা হলে বা পরিবেশের কোন ক্ষতি করা হলে লিজ তাৎক্ষণিক বাতিল বলে গণ্য হবে’। অথচ সহকারি কমিশনারের সামনেই বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিল।
এ ব্যাপারে সহকারি কমিশনার (ভূমি) আফিয়া আমিন পাপ্পা বলেন, ‘পরিবেশ বিধ্বংসী কোন কিছু ব্যবহার করা হচ্ছে না। আপনাকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। এছাড়া সীমানা লঙ্ঘনের দায়ে তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ এ সময় বালু সেলিম উত্তেজিত হয়ে বারবার বিভিন্ন কথা বললে সহকারি কমিশনার তার কথায় সায় দেন।
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা সহকারি কমিশনারের কাছে অভিযোগ জানান- ট্রাক্টর দিয়ে বালু বহনের কারণে রাস্তা ভেঙ্গে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মহাল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ওই জায়গাটি পরিদর্শনে যান সহকারি কমিশনার পাপ্পা। সেখানে অভিযানের বিষয়ে সহকারি কমিশনারের স্বাক্ষাৎকার নেন সাংবাদিকরা। স্বাক্ষাৎকার শেষে মোটর সাইকেলযোগে ফেরার পথে এখন টিভির হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ও দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারের যুগ্ম সম্পাদক কাজল সরকার, মাই টিভির প্রতিনিধি ও দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারের সিনিয়র রিপোর্টার নিরঞ্জন গোস্বামী শুভ এবং দেশ টিভির প্রতিনিধি ও দৈনিক হবিগঞ্জের বাণীর বার্তা সম্পাদক আমীর হামজার উপর হামলা চালায় বালু সিন্ডিকেটের হোতা ‘বালু সেলিম’ ও তার লোকজন। এ সময় হামলাকারীরা একটি ক্যামেরা ও একটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং একটি মোবাইল ভেঙ্গে ফেলে। স্থানীয় কয়েকজন লোক সাংবাদিকদের উদ্ধার করেন। পরে তারা চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এদিকে ৩ সাংবাদিকের উপর বালু খেকোদের হামলার প্রতিবাদে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব ও হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ নাহিজ। সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাস সাগর-এর পরিচালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন- প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা রফিক, মোঃ শাবান মিয়া, মোঃ ফজলুর রহমান, চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ ও রাসেল চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান, সায়েদুজ্জামান জাহির, চৌধুরী মাসুদ আলী ফরহাদ ও রাশেদ আহমদ খান, প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাকিল চৌধুরী, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল আলীম, সাধারণ সম্পাদক এসএম সুরুজ আলী, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবু সালেহ মোঃ নুরুজ্জামান চৌধুরী শওকত, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরী ও শ্রীকান্ত গোপ, আশরাফুল ইসলাম কহিনুর, মুজিবুর রহমান, নুরুল হক কবির, আনিছুজ্জামান চৌধুরী রতন, মোহাম্মদ নুর উদ্দিন, আব্দুর রউফ সেলিম, এম.এ আজিজ সেলিম, জাকারিয়া চৌধুরী, আজহারুল ইসলাম চৌধুরী মুরাদ, কাউছার আহমেদ, নায়েব হোসাইন, আখলাছ আহমেদ প্রিয়, সৈয়দ মিজান ইব্রাহীম, জুয়েল চৌধুরী, সাইফুর রহমান তারেক, সহিবুর রহমান, আব্দুল হাকিম, হোসাইন মোহাম্মদ হেলিম, অপু আহমেদ রওশন, রুবেল আহমেদ, তৌহিদ মিয়া ও শাওন খান প্রমূখ।
এ সময় নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।