সাধারণত আমরা প্রত্যেক দিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে থাকি। কিন্তু এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পাশাপাশি আরও অন্যান্য বেশকিছু নামাজ রয়েছে। আর এসব নামাজ বিশেষ বিশেষ কারণে পড়া হয়।
যেমন- সালাতুল তাজবি, তাহাজ্জু্ত, ইস্তেখারার নামাজ ইত্যাদি। আর এই বিশেষ নামাজগুলোর মধ্যে চাশতের নামাজ বা সালাতুত দোহা নামাজ রয়েছে।
চাশতের নামাজের নিয়ম জানার আগে আমাদের অবশ্যই জেনে নিতে হবে চাশতের নামাজ সম্পর্কে এবং চাশতের নামাজের কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে কিনা, চাশতের নামাজ কত রাকাত হয়ে থাকে এবং চাশতের নামাজের অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে।
চাশতের নামাজের সময়
যখন ইশরাকের নামাজ পড়ার পর এবং তার পরবর্তী সময় শুরু করে দ্বিপ্রহরের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চাশতের নামাজ পড়া যায়। অর্থাৎ সূর্য যখন এক মিটার পরিমাণ উপরে ওঠে যায় এবং সূর্য ওঠার পরবর্তী সময়ে ইশরাকের নামাজ আদায় করার পর কিছুক্ষণ জিকির করে চাশতের নামাজ আদায় করা হয়।
চাশতের নামাজ কত রাকাত
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) চাশতের নামাজ চার রাকাত পড়তেন। তাই আমরাও চার রাকাত পড়ে থাকি।
চাশতের নামাজের রাকাত সংখ্যা সর্বনিম্ন ২ রাকাত তবে হাদিসের বর্ণনা অনুসারে ৪, ৮ এবং ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। কিন্তু মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে রাসুল (সাঃ) হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বোন উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকাত চাশতের নামাজ পড়েছিলেন।
আর এই নামাজ সংক্ষিপ্তভাবে পড়া হলেও রাসুল (সাঃ) রুকু এবং সিজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকাত অন্তর অন্তর সালাম ফিরিয়ে ছিলেন। ( বুখারী, হাদিস নংঃ ২০৭)।
চাশতের নামাজের নিয়ত
আমি দুই রাকাত চাশতের নামাজ আদায় করছি।
দুই দুই রাকাআত করে চাশতের নামাজ আদায় করা যায়। যে কোনো সূরা দ্বারা এই নামাজ পড়া যায়। উভয় রাকাতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাতে হবে এবং আখেরি বৈঠক আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ শরীফ ও দোয়ায়ে মাছুরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে।
চাশতের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে কতিপয় হাদিস
সালাতুত দুহা বা চাশতের নামাজ হযরত বুরাইদা (রাজি.) থেকে বর্ণিত নবী করীম (সা.) বলেছেন, মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড়া আছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হলো প্রত্যেক জোড়ার জন্য একটি করে সাদকা করা।
সাহাবায়ে কিরাম (রাজি.) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কার শক্তি আছে এই কাজ করার? তিনি (সা.) বললেন, মসজিদে কোথাও কারও থু থু দেখলে তা ঢেকে দাও, অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও, তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত নামাজই এর জন্য যথেষ্ট।
এই হাদিসে চাশতের নামাজের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথাই বোঝানো হয়েছে এবং চাশতের নামাজ ৩৬০টি সাদকার সমতুল্য। (১) আবু দাউদ শরীফ, ১ম খণ্ড, ১৮২ পৃষ্ঠা। (২) মিশকাত শরীফ, ১ম খণ্ড, ১১৬ পৃষ্ঠা।
আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে আমল করার উপদেশ দিয়েছেন, প্রতি মাসের প্রথম তিন দিন রোজা রাখা; চাশতের নামাজ (সালাতুদ্ দুহা) আদায় করা এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিতরের নামাজ আদায় করার। (বুখারি, হাদিস নং-২৭৪; মুসলিম, হাদিস নং-১৫৬০)