হবিগঞ্জ সদরের নিজামপুর পাইকপাড়া বাইপাস সড়কে নির্মাণাধীন রেস্টুরেন্ট ‘বাউল ঘর’-এ চলমান অশ্লীলতা ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা অনুষ্টিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় গোপায়া
ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে সভা হয়। ৫৮ গ্রাম সমন্বয় যুব ঐক্য পঞ্চায়েত হবিগঞ্জের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন গোপায়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মন্নান এবং পরিচালনা করেন সংগঠনের সভাপতি এমএ রকিব জালাল। সভায় ৫৮ গ্রামের প্রায় ৫শতাধিক মুরুব্বী অংশগ্রহণ করেন। সকলের সম্মতিক্রমে বাউল গান বন্ধ করার জন্য ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। সদস্যরা হলেন, আহ্বায়ক চেয়ারম্যান আব্দুল মন্নান, সদস্য সচিব এমএ রকিব জালাল।
অন্যান্য সদস্যরা হলেন, মতিউর রহমান মতিন, তাজুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, হাজী কুমেদ আলী, আব্দুল হক মেম্বার, জাকারিয়া মিয়া, আরজু মিয়া, আব্দুল কাদির, শাহিন মিয়া, কামাল মিয়া ও হারুনুর রশিদ। ভবিষ্যতে যদি বাউল ঘরে বাউল গানের নামে অশ্লীলতা করা হয় তাহলে কমিটির নেতৃত্বে ৫৮ গ্রামবাসীকে নিয়ে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। সম্প্রতি বাউল ঘরে অশ্লীল গান-বাজনা কেন্দ্র করে গৌরাঙ্গের চক ও ধুলিয়াখাল গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের পাঁচজন আহত হন। এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে বাউল ঘরের এক উপস্থাপকের প্রশাসনিক প্রভাব খাটানোর দম্ভোক্তি স্থানীয়দের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, প্রতিষ্ঠানের মালিক নাকি “ওসি-এসপির সঙ্গে নয়, সরাসরি আইজির সঙ্গে আড্ডা দেন” যা আইন-শৃঙ্খলার প্রতি চরম অবজ্ঞা বলে মন্তব্য করছেন সচেতন মহল। স্থানীয়দের অভিযোগ-রাত গভীর হলে এলাকা জমে ওঠে টিকটকার, কনটেন্ট নির্মাতা, উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের অবাধ আড্ডায়। নাচ-গান, অশোভন ভিডিও শুটিং, লাইভ স্ট্রিমিং, এসব কর্মকাণ্ডে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোররা ‘বাউল ঘর সংস্কৃতি’র দিকে ঝুঁকে পড়ায় উদ্বেগ আরও বাড়ছে। সুশীল সমাজের অভিযোগ, দিনের বেলাতেই ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাউল ঘরে গিয়ে টিকটক ও ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করছে। রাতের বেলার বাউল গান বহু আগেই নিষিদ্ধ থাকলেও কোনো নিয়ম-কানুন মানা হচ্ছে না। প্রশাসনের নীরবতায় প্রশ্ন উঠেছে, কারা এ অশ্লীলতার পৃষ্ঠপোষক? অভিভাবকদের প্রশ্ন, রাতভর নাচ-গান, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, সোশ্যাল মিডিয়া লাইভ, এসব কি তরুণ প্রজন্মকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে না? সমাজবিদরা বলছেন, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ভেঙে পড়ছে; চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধপ্রবণতাও বাড়ছে। এদিকে সম্প্রতি তার বাউল ঘরের বিরুদ্ধে বিতর্ক সৃষ্টি হলে এর কর্ণধার আশিকুর রহমান ফেসবুক পোষ্টে বলেন, তার এটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখানে কোনো প্রকার অশ্লীলতা হবে না। কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, তার ঘোষণার পরও বন্ধ হয়নি অশ্লীলতা। এ নিয়ে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।