বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং নিয়ে বিতর্ক তুলেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ)। এতে পুরনো তথ্য-উপাত্তসহ নানা ধরনের ক্রটি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও আনা হয়েছে। এ ধরনের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
রোববার এনএসইউর নিজস্ব ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাংকিংয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে র্যাংকিংয়ের কাজে বিভিন্ন সূচকে দেয়া নম্বর বিশ্লেষণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে থাকা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এনএসইউর তুলনা করা হয়।
বলা হয়, বাস্তবভিত্তিক তথ্যের বিভিন্ন মানদণ্ডে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নম্বর প্রদানে বৈষম্য করা হয়েছে। গবেষণায় ব্যবহƒত বাস্তবভিত্তিক তথ্য ২০১২ সালের। পুরানো এ তথ্যে ৬০ শতাংশ নম্বর দেয়া হয়েছে। অপরদিকে ধারণাগত দিকে ২০১৭ সালের পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়েছে। এটা গবেষণার পদ্ধতিগত ভুল।
কেননা ২০১২ সালের তথ্যের সঙ্গে বর্তমানের কোনো মিলই নেই। গবেষণা কর্মে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিসংখ্যানবিদ ছিলেন না। যে কারণে গাণিতিক বিশ্লেষণে ভুল হয়েছে।
দুটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওআরজি কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড প্রায় একবছর ধরে র্যাংকিং তৈরির কাজ পরিচালনা করে। দেশের খ্যাতিমান এক শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকসহ পাঁচ জনের একটি উপদেষ্টা কমিটি গবেষণার সূচক নির্ধারণ করেন। সে আলোকে র্যাংকিং তালিকা গত ১০ নভেম্বর প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়। গবেষণায় বিবেচ্য সব ধরনের সূচক পূরণ করে এমন ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে র্যাংকিং করা হয়। সে অনুযায়ী র্যাংকিংয়ে প্রথমে স্থান পায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। দ্বিতীয় স্থানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। তৃতীয় স্থানে ইন্ডিপেনডেন্ট, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি রয়েছে।
গবেষণায় ধারণাগত ও বাস্তবভিত্তিক নামে প্রধান দুটি সূচক ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে ধারণাগত স্কোরে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি শীর্ষে অবস্থান করে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং তৃতীয় স্থানে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।
অপরদিকে বাস্তবভিত্তিক স্কোরে শীর্ষে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ডিপেনডেন্ট, তৃতীয় স্থানে নর্থ সাউথ। ধারণাগত স্কোরের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি (এনএসইউ) অবশ্য কোনো আপত্তি জানায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাংকিংয়ের বিভিন্ন দিকের পর্যালোচনা তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট স্টাডিজ দফতরের পরিচালক অধ্যাপক শরীফ নুরুল আহকাম। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, ডিন আবদুর রব খান, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান এবং জনসংযোগ দফতরের উপ-পরিচালক বেলাল আহমেদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য অধ্যাপক ইসলাম বলেন, আমরা এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রত্যাখান করছি না। এ ব্যাপারে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়ার ইচ্ছাও নেই। দেশে ভালো র্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থাকা প্রয়োজন। সেই হিসেবে ওআরজি কোয়েস্ট যে গবেষণা করেছে সে জন্য অভিনন্দন জানাই। এতে ইতিবাচক প্রতিযোগিতার পথ সুগম হবে। কিন্তু যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তাতে ক্রটি আছে। বিভিন্ন সূচকে যে নম্বর প্রদান করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই এই র্যাংকিংয়ের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখার অধিকার আমাদের আছে।
তিনি আরও বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক। তারা ভালো করলে আমরা অভিনন্দন জানাব। কারো পা কেটে আমরা লম্বা হতে চাই না। বরং আমার ক্রটি দূর করেই বড় হতে চাই।